ঈদুল আজহা, ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত একটি দিন। এই দিনে মুসলিম সম্প্রদায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করে। বছর ঘুরে ঈদ আসে, আর আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে – “ঈদুল আজহা ২০২৫ কত তারিখে?” অথবা “কোরবানির ঈদ কত তারিখে ২০২৫ (Eid ul Adha 2025 Date)?”। চলুন, ২০২৫ সালের কোরবানির ঈদের তারিখ এবং এই ঈদকে ঘিরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেই।
ঈদুল আজহা ২০২৫
চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন যে ঈদুল আজহা ঠিক কবে হবে। তবে, সাধারণত ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ঈদুল আজহা জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পালিত হয়। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে, ২০২৫ সালের ঈদুল আজহা সম্ভবত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্দিষ্ট তারিখ জানার জন্য চাঁদ দেখার ঘোষণার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ঈদুল আজহা ২০২৫ জুন মাসে হবে। বর্তমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জুন মাসের ১৭ তারিখে ঈদুল আজহা ২০২৫ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও চাঁদ দেখার পর বাংলাদেশ সরকার ঈদের সঠিক তারিখ ঘোষণা করবেন।
ইসলামি চান্দ্র পঞ্জিকায়, ঈদুল আজহা জ্বিলহজ্জের ১০ তারিখে পড়ে। আন্তর্জাতিক (গ্রেগরীয়) পঞ্জিকায় তারিখ প্রতি বছর ভিন্ন হয়, সাধারণত এক বছর থেকে আরেক বছর ১০ বা ১১ দিন করে কমতে থাকে। ঈদের তারিখ স্থানীয়ভাবে জ্বিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে।
চাঁদ দেখার গুরুত্ব
ইসলামিক মাসগুলো চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে শুরু হয়। তাই, ঈদ কবে হবে তা জানার জন্য চাঁদ দেখার ঘোষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আজহার তারিখ নির্ধারণের জন্য জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার পরই ঈদের তারিখ নিশ্চিত করা যায়।
কোরবানির তাৎপর্য ও ফজিলত
কোরবানি ইসলামের এক মহান ইবাদত, যা প্রতিটি মুসলমানের আত্মত্যাগ, তাকওয়া ও আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যের প্রতীক। ঈদুল আজহার দিনে এই ইবাদতের মাধ্যমে স্মরণ করা হয় হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আ.)-এর মহান ত্যাগের ঘটনা, যেখানে ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশে পুত্রকে কোরবানি করতে উদ্যত হন। আল্লাহ এই নিঃস্বার্থ আনুগত্য কবুল করে পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি কবুল করেন।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
“আল্লাহর কাছে পশুর গোশত ও রক্ত পৌঁছে না, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।” (সূরা হজ: ৩৭)
এ আয়াত প্রমাণ করে, কোরবানির মূল শিক্ষা হলো আত্মিক শুদ্ধতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এটি কেবল পশু জবাই নয়, বরং ভ্রাতৃত্ব, সহানুভূতি ও মানবিকতার শিক্ষা। গরিব-দুস্থদের মাঝে কোরবানির মাংস বিতরণ করে সমাজে সাম্য ও ভালোবাসার বন্ধন তৈরি হয়।
সুতরাং, কোরবানি শুধুই একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়—এটি এক মহৎ আত্মত্যাগের শিক্ষা, যা প্রতিটি মুসলমানকে আল্লাহর প্রতি আরও নিবেদিত করে তোলে।
কোরবানির নিয়ম ও মাসায়েল
কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মূলত সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর ওয়াজিব। ঈদুল আজহার দিন ও পরবর্তী দুই দিন—মোট তিন দিনের মধ্যে যে কোনো একদিনে কোরবানি আদায় করতে হয়। তবে কোরবানি করার সময় অবশ্যই নামাজের পর, অর্থাৎ ঈদের নামাজের পর পশু জবাই করতে হবে।
কোরবানির জন্য উপযুক্ত পশু হতে হবে স্বাস্থ্যবান, নির্দিষ্ট বয়স পূর্ণ এবং ত্রুটিমুক্ত। যেমন—গরু ও মহিষ কমপক্ষে দুই বছর, ছাগল ও ভেড়া এক বছর এবং উট পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়া আবশ্যক। অতিরিক্ত দুর্বল, অন্ধ, পঙ্গু কিংবা শরীরে বড় ত্রুটি থাকলে সে পশু কোরবানি গ্রহণযোগ্য নয়।
একজন ব্যক্তি একটি ছাগল বা ভেড়া কোরবানি দিতে পারেন। গরু বা উট সাতজন মিলে ভাগ করে কোরবানি করা যায়, তবে সকল অংশগ্রহণকারীর নিয়ত শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হতে হবে।
কোরবানির মাংস তিন ভাগে বণ্টন করা উত্তম—এক ভাগ দরিদ্রদের, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের এবং এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য রাখা যায়। কোরবানির সময় নিয়ত করা, পশুকে আদর করে ভালোভাবে জবাই করা, এবং সুন্নত অনুযায়ী দোয়া পাঠ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই ইবাদতের মাধ্যমে কেবল পশু জবাই নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও মানুষের মাঝে ভালোবাসা ও সহানুভূতির বন্ধন গড়ে ওঠে। তাই কোরবানিকে যেন আমরা আত্মশুদ্ধির এক মহান সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করি।
২০২৫ সালের ঈদুল আজহার সম্ভাব্য ছুটি
ঈদের সময় সরকারি ছুটি থাকে। সাধারণত, ঈদের আগের দিন এবং ঈদের দিন ছুটি থাকে। ২০২৫ সালের ঈদুল আজহায়ও সম্ভবত দুই-তিন দিনের ছুটি থাকবে। ছুটির দিনগুলোতে সবাই পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেয়।
ঈদুল আজহা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
ঈদুল আজহা নিয়ে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
ঈদুল আজহা কেন পালন করা হয়?
ঈদুল আজহা হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর ত্যাগের স্মরণে পালন করা হয়। আল্লাহ তায়ালার প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসার পরীক্ষায় তিনি নিজের প্রিয় পুত্রকে কোরবানি করতে প্রস্তুত ছিলেন।
কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত?
কোরবানির পশু সুস্থ, সবল ও ত্রুটিমুক্ত হওয়া উচিত। পশুর বয়স এবং শারীরিক গঠন কোরবানির জন্য উপযুক্ত হতে হয়।
কোরবানির মাংস কীভাবে বিতরণ করা উচিত?
কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে বিতরণ করা উত্তম। এক ভাগ গরিব-দুঃখীদের, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের এবং এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য রাখা যায়।
কোরবানি করার নিয়ম কী?
কোরবানি করার আগে পশুটিকে ভালোভাবে খাওয়ানো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। কোরবানির সময় ধারালো ছুরি ব্যবহার করতে হয়, যাতে পশুর কষ্ট কম হয়। কোরবানি করার সময় দোয়া পড়া সুন্নত।
ঈদুল আজহার তাৎপর্য কী?
ঈদুল আজহা ত্যাগের মহিমা ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের শিক্ষা দেয়। এই দিনে আমরা নিজেদের পশুত্বকে কোরবানি করে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করি।
শেষ কথা
ঈদুল আজহা ২০২৫ কবে হবে তা জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে চাঁদ দেখার ঘোষণার জন্য। তবে, এই সময়ের মধ্যে আমরা কোরবানির তাৎপর্য ও নিয়ম সম্পর্কে জেনে প্রস্তুতি নিতে পারি। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে ত্যাগ – এই শিক্ষাকে ধারণ করে আমরা যেন সুন্দর একটি ঈদ উদযাপন করতে পারি।
আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি আপনাকে ঈদুল আজহা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সাহায্য করেছে। ঈদ-উল-আজহা ২০২৫ (Eid ul Adha 2025) সালের সম্ভাব্য তারিখ এবং অন্যান্য তথ্য জানার জন্য আমাদের সাথেই থাকুন। ঈদ মোবারক!